নবীন নিউজ, ডেস্ক ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫২ এ.এম
বিশ্ব ইজতেমা এক অনন্য ইসলামি সমাবেশ। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। এটি কোনো রাজনৈতিক কিংবা বর্ণগত বৈষম্যের স্থান নয়; বরং এটি আত্মশুদ্ধি, ঈমান দৃঢ়ীকরণ এবং দাওয়াত ও তাবলিগের এক বিশ্বজনীন ময়দান। প্রতি বছর বাংলাদেশে টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসলমান সমবেত হয়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আশায় দোয়া, জিকির, ওয়াজ-নসিহত ও দীন প্রচারের জন্য জড়ো হন।
তাবলিগ জামাতের কাজ কোনো সংগঠন বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রচারণা নয়, বরং এটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াতি মিশনেরই এক প্রাণবন্ত ধারা। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে যেমন দ্বীন প্রচার করতেন, তেমনি তাবলিগ জামাতের মেহনতও সেই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মুসলমানদের দিনি জ্ঞান ও আমল বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস ও গুরুত্ব
বিশ্ব ইজতেমার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, যখন মাওলানা ইলিয়াস রহ. প্রবর্তিত তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কাজ বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রসার লাভ করে। প্রথমদিকে ছোট পরিসরে শুরু হলেও কালের পরিক্রমায় এটি আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইসলামি জমায়েতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রধান উদ্দেশ্য হলো—
১. আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুসলমানদের আমল-আখলাকের উন্নতি করা।
২. ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও তাবলিগের পদ্ধতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
৩. মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করা।
৪. দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত হয়ে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য প্রস্তুত হওয়া।
বিশ্ব ইজতেমায় সাধারণত তিনদিনের কর্মসূচি চলে, যেখানে ইমান-আকিদা, নামাজের গুরুত্ব, পরকালীন জীবন, দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তাবলিগ জামাতের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমার সমাপ্তিতে বিশ্ব মুসলিমের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়, যা 'আখেরি মোনাজাত' নামে পরিচিত।
তাবলিগ জামাত: নববী দাওয়াতের ধারা
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. বুঝতে পেরেছিলেন যে, মুসলমানরা ধীরে ধীরে ইসলামি শিক্ষা ও আমল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই তিনি এক সহজ পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু করেন, যার মূলনীতি ছিল—একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শিখিয়ে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।
তাবলিগ জামাতের প্রধান ছয়টি মূলনীতি হলো—
১. কালেমা: ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও তাওহিদের শিক্ষা।
২. নামাজ: আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য সালাতের গুরুত্ব।
৩. ইলম ও জিকির: ইসলামের মৌলিক জ্ঞান অর্জন ও আল্লাহর স্মরণ।
৪. ইকরামুল মুসলিমীন: সকল মুসলমানের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা।
৫. ইখলাস-নিয়ত: সকল আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা।
৬. দাওয়াত ও তাবলিগ: দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করা। তাবলিগ জামাতের মেহনত কোনো বক্তৃতা বা আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি বাস্তবধর্মী আমল-ভিত্তিক আন্দোলন। সাধারণ মুসলমানরা কয়েক দিনের জন্য আল্লাহর পথে বের হয়ে নিজেদের আত্মশুদ্ধি করে এবং অন্যদেরও দ্বিনের দিকে আহ্বান জানায়।
বিশ্ব ইজতেমা: এক অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাবেশ
বিশ্ব ইজতেমা শুধু বাংলাদেশ বা ভারতীয় উপমহাদেশের বিষয় নয়; এটি এক বিশ্বজনীন ইসলামি মজলিশ, যেখানে বিশ্বের প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশের মুসলমানরা অংশগ্রহণ করে। এটি কোনো রাজনৈতিক কিংবা জাতিগত মঞ্চ নয়, বরং এটি সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামের খাঁটি শিক্ষা প্রচারের এক উন্মুক্ত ময়দান।
বিশ্ব ইজতেমার অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ—
১. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ: এখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা বা মতবাদের স্থান নেই।
২. আন্তর্জাতিক মুসলিম সংযোগ: বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
৩. বিশেষ দোয়ার মহফিল: আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত কামনা করা হয়।
৪. নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ: অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের খরচে ইজতেমায় যোগ দেয়, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন থেকে সহায়তা গ্রহণ করা হয় না।
ইজতেমার প্রভাব ও মুসলিম সমাজে তাবলিগের ভূমিকা
তাবলিগ জামাত ও বিশ্ব ইজতেমার প্রভাব মুসলিম সমাজে বহুমুখী। এটি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের দীনি পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে-সব মানুষ নামাজ, রোজা, দীনি শিক্ষা থেকে দূরে ছিল, তারা এখানে এসে ইসলামের সৌন্দর্য অনুভব করে এবং জীবনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ব ইজতেমার প্রভাব— লক্ষ লক্ষ মানুষ নামাজ-রোজার প্রতি যত্নবান হয়। অনেক গাফিল মুসলমান দিনদার হয়ে ওঠে এবং দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করে। মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। সামাজিকভাবে ইসলামি মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রচার হয়।
সবশেষে আমরা বলতে পারি, বিশ্ব ইজতেমা ও তবলিগ জামাত ইসলামের এক অনন্য প্রচার মাধ্যম, যা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠনের আন্দোলন নয়; বরং এটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহনতের এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, ঈমান দৃঢ়ীকরণ এবং দাওয়াতি মেহনতের মাধ্যমে দ্বিনের প্রচার ও প্রসারে এটি এক অনন্য উদাহরণ।
আমাদের উচিত, দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং বিশ্ব ইজতেমার মতো আত্মশুদ্ধিমূলক পরিবেশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দ্বীনি জ্ঞান ও আমলকে সুদৃঢ় করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং বিশ্ব ইজতেমার মতো ময়দানে আমাদের শামিল হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।
নবীন নিউজ/জেড
স্বামীর ভালোবাসা ফিরিয়ে আনার কোরআনি আমল
অভাব-অনটন থেকে মুক্তি মিলবে যে দোয়ায়
আল-আজহার মসজিদের ১ হাজার ৮৫ বছর উপলক্ষে ইফতারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
একটি পাখির কারণে আফ্রিকার প্রথম মসজিদের স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল!
ধর্ষণকারীকে যে শাস্তি দিতে বলেছে ইসলাম
রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?
ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন আজহারী
রোজার মাস মানেই কি ভালো খাবার খাওয়া?
রমজানে রোগীদের জন্য কিছু মাসয়ালা
অজু-গোসলের সময় গলায় পানি গেলে রোজা ভেঙে যাবে?
মসজিদে হারাম ও নববিতে আজ জুমার নামাজ পড়াবেন যারা
ইফতারে ঝটপট সবজি কাটলেট তৈরি করবেন যেভাবে
আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোজা ভেঙে যাবে?
ইফতারের পর ধূমপান করলে যেসব বিপদ ঘটে শরীরে
যেসব কারণে রোজার ক্ষতি হয় না
জাকাতের টাকায় ইফতার সামগ্রী দেওয়া যাবে?
ইফতারের আগে করা যায় যেসব আমল
রোজা আদায় না করলে যে শাস্তি
মানুষের সেবা করার সেরা মাস রমজান
‘আমিই জীবন দেই, আমিই মৃত্যু দেই, আর আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে’
রমজানে যে ৭ আমল বেশি করতে হবে
রমজান মাসে ফজিলতপূর্ণ যে ৩ আমল করবেন
ইফতারে আরবদের পাতে শোভা পায় যেসব ঐতিহ্যবাহী খাবার
রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজানে ওমরা করলে আসলেই কি হজের সওয়াব পাওয়া যায়?
সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে খতম তারাবি পড়ার আহ্বান
সাহাবিদের যেভাবে পরীক্ষা নিতেন নবীজি
জিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়বেন
হারামাইনে ১০ রাকাত তারাবির সিদ্ধান্তে দেওবন্দ মাদরাসার উদ্বেগ
ইফতারে কোন দেশে কী খাওয়া হয়?