শক্রবার ১০ অক্টোবার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

কেন এত কথা সেন্টমার্টিন নিয়ে!

নবীন নিউজ, ডেস্ক ১২ নভেম্বার ২০২৪ ০৯:৩৬ এ.এম

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনার সেন্টমার্টিন দ্বীপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ, হোটেলসহ ভারী স্থাপনা, উচ্চশব্দে গান-বাজনা, রাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা, পলিথিন ও গাছপালা কেটে ফেলাসহ নানা কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে।

দ্বীপটির জীববৈচিত্র রক্ষায় বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। সবশেষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বীপটিতে পর্যটক সীমিত করাসহ বেশকিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। সরকারের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে দ্বীপটিকে ঘিরেও নানা জল্পনা কল্পনাও ছড়িয়েছে।

অবশ্য সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেন্টমার্টিন নিয়ে নতুন করে তারা কোনো কিছুই করেনি। দ্বীপটি বাঁচাতে আগে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তাই তারা বাস্তবায়ন করছে। এজন্য যতটুকু কঠোর হওয়া দরকার তাও তারা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

কেন হঠাৎ আলোচনায় সেন্টমার্টিন

গত ২২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, এখন থেকে পর্যটকরা কেবল তিন মাসে দ্বীপটিতে যেতে পারবেন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে দ্বীপটিতে রাতে থাকা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে থাকা গেলেও দিনে দুই হাজারের বেশি যাওয়া যাবে না। এত বছর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকরা দ্বীপটিতে ভ্রমণ করলেও এখন থেকে সেটি হবে না। এই মাসে দ্বীপকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে।

সরকারের এমন ঘোষণার পর সেন্ট মার্টিনে স্বাভাবিক যাতায়াতে কঠোর হতে দেখা গেছে স্থানীয় প্রশাসনকে। সেন্টমার্টিনে যেতে হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের লাগছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। পর্যটকসহ দ্বীপের বাইরের কেউ সেখানে যেতে পারছেন না। তবে গবেষণা কাজে এনজিওকর্মী বা সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরা যেতে পারছেন। তবে তাদেরও লাগছে লিখিত অনুমতি।


এমন কঠোর পদক্ষেপের কারণে অনেকেই সন্দেহ করছেন- দ্বীপ নিয়ে সরকারের কোনো বিশেষ পরিপকল্পনা রয়েছে কিনা? বিশেষ করে র্দীঘদিন প্রচার করা হচ্ছে-এই দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী ঘাঁটি করতে চায়।

তবে বিষয়টি পরিস্কার করেছে পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, যে প্রচারণাটা চালানো হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে বলা হয়েছে যে এখানে ঘাঁটি করার কোনো সুযোগ নেই, আয়তনও নেই। এটার গঠন হচ্ছে প্রবাল, এখানে কীভাবে ঘাঁটি হবে। মার্কিন দূতাবাস থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে যে এমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, কথাও হয়নি। ফলে অনেক কথা যদি আপনি বলেনও বোঝানও যারা বুঝতে চাইবে না তারা বুঝবে না। আপনি জেগে ঘুমালেতো আপনাকে ঘুম ভাঙ্গাতে পারব না। সেটা জরুরিও না। এখন প্রক্রিয়া শুরু হলো কীভাবে সেন্ট মার্টিনকে বাাঁচাব। সেন্টমার্টিনকে বাঁচানো গেলে এলাকার মানুষকে বাঁচানো যাবে, শিল্প বাঁচবে, পর্যটনও বাঁচবে।

সেন্টমার্টিন এমন কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্তটি নতুন কিছু নয়। ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও টেকনাফ সৈকতসহ দেশের ছয়টি এলাকাকে সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৮ সালে দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিকালীন অবস্থান নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়, যা শুধু নিষিদ্ধেই সীমিত ছিল না। দ্বীপটির অধিবাসীদের ধাপে ধাপে মূল ভূখন্ডে সরিয়ে আনারও পরিকল্পনা ছিল। একই সঙ্গে হোটেল-মোটেলসহ সব স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছিল সে সময়কার সরকার। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।


পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা আর পর্যটনের কারণে সেন্টমার্টিনের তাপমাত্রার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকছে। পাশাপাশি লবণাক্ততা পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে বন উজাড় করা হচ্ছে। এছাড়া কচ্ছপের আবাস ধ্বংস, মিঠাপানির সংকট তীব্র হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় সেন্টমার্টিনের অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই সেন্টমার্টিনকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগ ইতিবাচক।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের অধিনে আশির দশকে সেন্টমার্টিন নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। সে প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের ওপর দায়িত্ব ছিল দ্বীপটি নিয়ে একটা প্রতিবেদন দেওয়ার। তার সঙ্গে আমিও যুক্ত ছিলাম। তখন সেন্টমার্টিনে ৩ হাজারের মত মানুষের বসবাস ছিল। ওই কমিটি প্রস্তাব দিয়েছিল সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করতে হলে সেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবংবাড়তি জনসংখ্যা স্থানস্তর করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, এটাকে যেন মেরিন পার্ক করা হয়। ফলে একদিকে যেমন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আসবে তেমনি গবেষণার কাজও করা যাবে। কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করেনি।

তিনি বলেন, দ্বীপকে রক্ষা করতে হলে একক কোনো পরিকল্পনায় কাজে আসবে না। সম্মিলিত ভাবে না হলে এটা সম্ভব না। কারণ, এখানে অনেক ইন্টারেস্টিং গ্রুপ রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ কথা হচ্ছে এই দ্বীপ আমাদের রক্ষা করতে হবে।

কী বলছে স্থানীয় মানুষ:

সরকার যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তাতে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারী আব্দুল মালেক মোবাইল ফোনে বলেন, দ্বীপে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ বসবাস করে। দ্বীপের মানুষ এক সময় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন তাদের আয়ের প্রধানতম উৎস পর্যটন। এখন সরকার বলছে, বছরে ২ মাস পর্যটক রাত্রী যাপন করবে। এতগুলো মানুষ দুই মাসের আয় দিয়ে বছরের বাকি দিন কিভাবে চলবে?

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে এতটুকই চাচ্ছি যে দুই মাস থেকে চার মাস হোক। দুই হাজারের জায়গায় পাঁচ হাজার হোক।

তিনি বলেন, আমরাও নিয়ন্ত্রণ চাই। কিন্তু সরকার সেন্টমার্টিন নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিবে সেটা আমরা জানিও না। আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়নি। স্থানীয় মুরুব্বিরা রয়েছেন, শিক্ষিত লোকজন রয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নিয়ে যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাহলে এত বিতর্ক বা আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।

তিনি বলেন, আমাদের এখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে দ্বীপে আসতে হয়। আমাদের অনেক অত্মীয় স্বজন রয়েছে দ্বীপের বাইরে। তারাও আসতে পারে না। আমরা আশা করি সরকার দ্রুতই সংকটের সমাধান করবে।

প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, যেহুত সেন্টমার্টিন ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া। তাই পরিবেশ ও বন মন্ত্রালেয়ের প্রথম কাজটি করা উচিত ছিল একটা মাস্টারপ্ল্যান করা। স্থানীয় বাসিন্দাসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা। তাহলে এখন যে একেজন একেক কথা বলছেন সেটি হতো না। কোনো বিতর্কও তৈরি হতো না।

তিনি বলেন, আমি যেটা মনে করি সেন্টমার্টিন নিয়ে পানি অনেকদূর গড়িয়েছে। কোনো সমন্বয় নাই এই দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য। যারা স্টেকহোল্ডার তারা কি আদৌ বুঝে দ্বীপটার গুরুত্ব কি? তাহলে সেটা বুঝানোর দায়িত্ব পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের। একমাত্র কোরাল দ্বীপ এটাকে আমদের অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। সেখানে পানির সমস্যা আছে, বিল্ডিং করার সমস্যা আছে, লোড নেওয়ার ক্যাপাসিটি আছে। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে দ্বীপ রক্ষা করার জন্য সম্মিলিত ভাবে একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার, না হলে এটা রক্ষা করতে পারবো না।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার যে সেন্টমার্টিন নিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সেটা ওনাদের (স্থানীয়) সঙ্গে আলাপ করে করেছে। আমি আলাপ করিনি সেটা ভিন্ন কথা। এখন সেন্টমার্টিন ঘিরে যে প্রচারণা চলছে তাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেটা আমরা করব। সেন্টমার্টিন দ্বীপটাকে ওনাদের স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটা যদি ২০৪৫ সালের মধ্যে ডুবে যায় তবে কি ভালো হবে?

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে সোহেল তাজকে

news image

কর্মীর হাতে পিটুনি খেয়ে বিএনপি নেতার আত্মহত্যা

news image

ইবনে সিনা হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর

news image

আসন পুনর্বহালের দাবিতে নির্বাচন ভবন ঘেরাও

news image

বদলি হলেই নতুন বিয়ে! সরকারি কর্মকর্তার ১৭ স্ত্রীর অভিযোগে তোলপাড়

news image

দাওয়াত না দেওয়ায় মাদ্রাসার সব খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে গেলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

news image

দালাল ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

news image

মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে স্কুলছাত্রীকে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক

news image

বিএনপির কাউন্সিলে ভোট গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাই

news image

বিদেশে বসে আদালতে ‘সশরীরে’ হাজিরা দেন আসামি

news image

শ্বাসরোধে হত্যার পর উর্মীর মরদেহ খালে ফেলে দেন মা-বাবা

news image

৬৭ হাজারে বিক্রি হলো পদ্মার পাঙাশ

news image

ফজলুর রহমানের প‌ক্ষে মি‌ছিল, ‌স্লোগা‌নে উত্তাল অষ্টগ্রাম

news image

১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

news image

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩ জন

news image

সড়কে মিলল ৬ পুরুষের কাটা মাথা, দেহ গায়েব

news image

ব্র‍্যাক এর কিস্তির চাপ আর অপমান সইতে না পেরে ব্যাবসায়ীর আত্মহত্যা

news image

সাগরে তিন দিন ভাসতে থাকা ৮ জেলে উদ্ধার

news image

কোচিং সেন্টার থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

news image

চাকরির আশায় বিদেশ গিয়ে ‘না খেয়ে’ মারা গেলেন গাইবান্ধার যুবক

news image

১২ জেলায় বন্যার শঙ্কা

news image

পরকীয়া নিয়ে ফেসবুক পোস্ট, ছাত্রদল কর্মীর ছুরিকাঘাতে যুবদল কর্মী নিহত

news image

স্বজন পরিচয়ে হাসপাতালে ঢুকে নবজাতক নিয়ে উধাও নারী

news image

গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোডে টুকরো টুকরো করা লাশের ব্যাগ রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা

news image

নাটোরে প্রাইভেটকার থামিয়ে চালককে গলা কেটে হত্যা

news image

‘আওয়ামী লীগের লোক’ ঢোকায় কালিয়াকৈরে দুধ দিয়ে ধোয়া হলো বিএনপির কার্যালয়

news image

সরকারি অনুষ্ঠানে আ.লীগ নেতার অংশগ্রহণ

news image

জুলাই গণঅভ্যুত্থান অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে অসুস্থ শতাধিক শিক্ষার্থী

news image

আওয়ামী লীগ কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ, এবার মেজর সাদিকের স্ত্রী ডিবি হেফাজতে

news image

সড়কে ককটেল ফাটিয়ে গণডাকাতি